বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের জন্য ১৯৭ রানের লক্ষ্য দিয়ে একটু সস্থির নিঃশ্বাস ফেলছে সফরকারী উদীয়মান আফ্রিকান নারীরা। এমন লক্ষ্য তাড়া করা খুব একটা সহজ নয়। তারপর আবার প্রথম ম্যাচে তারা স্বাগতিকদের আটকে দিয়েছিল ১৯৫ রানে। সেই হিসাবে বাংলাদেশের জন্য এই লক্ষ্য বেশ কঠিনই বটে। সেই লক্ষ্যকে আরও কঠিন করে তুলেন আফ্রিকান বোলার মাথে। মাত্র ১৬ রানেই ওপেনার শামীম সুলতানাকে সাজঘরে পাঠান আফ্রিকান এই বোলার। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে, প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া স্বাগতিকদের।
৩ নম্বরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেন। এসময় দলের হাল ধরেন জ্যোতি। এক-দুই আর বাউন্ডারিতে দলের রানের চাকা সচল করতে থাকেন তিনি। প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ৭২ রান করা ব্যাটার পিঙ্কিকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে গড়েন ৪৪ রানের জুটি, যা দলের জয়ে বড় ভিত্ত গড়ে দেয়। দলীয় ৮২ রানে পিঙ্কি আউট হলে তাদের এই জুটি ভাঙ্গেন সফরকারী দলের বোলার মাইকেলা অ্যান্ড্রæস।
এরপর কোনো উইকেট হারাতে দেননি নিগার সুলতানা এবং রোমানা আহমেদ। দুজনে মিলে চতুর্থ উইকেটে গড়েন অবিচ্ছিন্ন ১১৫ রানের জুটি। ১১৫ রানে জুটি গড়ার পথে নিজের সেঞ্চুরি তুলে নেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। ১৩৫ বলে ১১ বাউন্ডারিতে ১০১ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জ্যোতি। ফলে বাংলাদেশ জয় পায় ৭ উইকেটে। ব্যাট হাতে এই জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন জ্যোতি। এই জয়ের ফলে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-০ এগিয়ে গেল স্বাগতিক বাংলাদেশ ইমার্জিং মহিলা দল।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং মহিলা দল। প্রথম ব্যাট করতে নেমে তাদের দুই ওপেনার মিলে যোগ করেন ৫৭ রান। প্রোটিয়া এই দুই ব্যাটার স্টেইন এবং রবিন সার্লে ধীরগতির ব্যাটিং করেন। এই রান সংগ্রহ করতে তাদের খেলতে হয়েছে ১৮ ওভার ১ বল। দলীয় ৫৭ রানে সার্লেকে হারায় সফরকারীরা। রিতু মনির বলে স্টাম্পিং হয়ে সাজঘরে ফিরেন প্রোটিয়া এই ব্যাটার।
ইনিংসের ২১তম ওভারে সালমার প্রথম শিকারে পরিণত হন শানগেজ। দ্রæত দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পরে প্রোটিয়ানরা। ওপেনার স্টেইন এক প্রান্ত আগলে রাখেন। ৬৮ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর আন্নে বোসেকে নিয়ে দলকে এগিয়ে যেতে থাকেন ওপেনার স্টেইন। তাদের সেই জুটি স্বাগতিকদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে উঠে। দুজনে মিলে চতুর্থ উইকেটে গড়েন ৭৮ রানের জুটি।
স্বাগতিকদের জন্য বিপদ হয়ে উঠা স্টেইনকে ফেরান সালমা খাতুন। ইনিংসের ৩৯তম ওভারে স্টেইনকে এলবিডবিøউর ফাঁদে ফেলে নিজের দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন সালমা। ব্যক্তিগত ৮০ রানে আউট হন স্টেইন। ৬ বল পরেই স্টেইনের দেখানো পথে হাঁটেন বোসে। নাহিদা আক্তারের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন বোসে।
একসময় মনে হয়েছিল প্রোটিয়া ব্যাটাররা আজ দুইশো পার করবে অনায়াসে। কিন্তু বোসে আউট হওয়ার পর সেটা আর হয়ে উঠেনি। কোনো রকম ৫০ ওভারে ১৯৬ রান সংগ্রহ করে তারা। নাহিদা আক্তার এবং জাহানারা আলমদের বিপক্ষে শেষদিকে তেমন বেশি রান করতে পারেননি সফরকারী দলের পরবর্তী ব্যাটাররা। নাহিদা আক্তার, সালমা খাতুন এবং রিতু মনিদের দারুণ বোলিং নৈপুণ্যে দুইশো পাড় হতে দেয়নি বাংলার বাঘিনীরা। নাহিদা আক্তার এবং রিতু মনি তিনটি করে উইকেট শিকার করেন। ১৯৭ রান লক্ষ্য সহজে তাড়া করে বাংলাদেশ মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে।
সিরিজের বাকি ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ৮, ১১ ও ১৩ এপ্রিল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী দল : ১৯৬/৮ (৫০); স্টেইন ৮০, সার্লে ১৯, শানগেজ ৪, ক্রিস্টি ০, আন্নেকে ৪২, টুনিক্লিফ ১৫, জাফতা ৭, জোন্স ১৬*, অ্যান্ড্রæস ৪; সালমা ১০-২-২৩-১, নাহিদা ১০-০-৩৫-৩, রিতু মনি ৮-১-২৫-৩।
বাংলাদেশ ইমার্জিং নারী দল : ১৯৭/৩ (৪৫.৩), মুর্শিদা ২১, শামীমা ৭, নিগার ১০১*, পিঙ্কি ১৫, রুমানা ৪৫*; মাথে ৫-০-৩৬-১, মিশেলা ৮.৩-১-৩৩-১, আন্নেকে ৭-০-৩১-১।
ফলাফল : বাংলাদেশ ইমার্জিং নারী দল ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : নিগার সুলতানা জ্যোতি (বাংলাদেশ ইমার্জিং নারী দল)।