বাঙালির প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ইতিহাস পুরনো হলেও এক হয়ে দেশব্যাপী প্রথম সফল প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছিল ভাষা আন্দোলনকে ঘিরেই। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার এ আন্দোলনের মাঝে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ নিহীত। অন্যদিকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার চেষ্টাও ছিল বাঙালিকে চাকরি- বাকরিসহ সবদিকে পিছিয়ে রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ। তাই এই সংগ্রাম বাঙালির জন্য অনিবার্য ছিল। এই ভাষা আন্দোলনের সাহস ও প্রক্রিয়া আমাদের পরবর্তীতে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শক্তি যুগিয়েছে। ভাষা আন্দোলনে তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখেন। সেই আন্দোলনের সফলতা বঙ্গবন্ধুকেও প্রেরণা জুগায়। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণে বহু ত্যাগ- তিতীক্ষার পর আমরা পাই স্বাধীনতা। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিকে আমরা শহীদ দিবস হিসেবে পালন করছি। ১৯৯৯ সালে দিবসটি ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর বিশ্বের প্রায় সব দেশেই দিবসটি পালিত হচ্ছে। যেহেতু আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলনের দিনটিই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, তাই সব ভাষাভাষী মানুষের মাতৃভাষা রক্ষায় আমাদের বাড়তি প্রত্যয় রয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী এমনকি খোদ বাংলাদেশেও অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ইদানিং বাংলা- ইংরেজি মিশিয়ে অদ্ভুতভাবে কথা বলা হচ্ছে। আশংকার বিষয় হচ্ছে শুধু ঘরোয়া আলোচনায় নয় অনেক প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনা এবং গণমাধ্যমেও এমন ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়া দেশের বিত্তশালী পরিবারের অনেক শিশুরা সঠিকভাবে বাংলা শিখছে না। তাদের কারও কারও বাংলা ভাষার প্রতি অনিহা রয়েছে। তাই নতুন প্রজন্মকে শুদ্ধভাবে নিজের মাতৃভাষা শিখতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিভিন্ন ব্যানার- ফেস্টুনে ভুল বানানে লিখা হচ্ছে। এ থেকে অনেকেই ভুল বনান শিখছেন-এ থেকেও আমাদের পরিত্রাণ দরকার।
এ বছর আমরা মুজিববর্ষ পালন করছি। ২০২১ সালেই পালিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি। এমন দিনে আমাদের জাতীয়তা বোধের সুতিকাগার ভাষা দিবস আমাদের চেতনাকে আরও শাণিত করবে- এমনটিই প্রত্যাশা করছি। একুশ আমাদের প্রেরণার উৎস। একুশের চেতনাকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।
এম/আর